কাস্টমস: বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসার সময় শুল্ক দিয়ে এবং বিনা শুল্কে আনতে পারবেন যেসব জিনিস
বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময় অনেক যাত্রী শুল্ক আইন নিয়ে চিন্তিত থাকেন। বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আসতে গিয়ে অনেকেই কাস্টমসের জটিলতার মুখোমুখি হন। প্রায়ই দেখা যায়, পরিবার বা প্রিয়জনদের জন্য কেনা কোনো উপহার, বা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আটকে দেয়। আবার কখনও কখনও যথাযথভাবে শুল্ক প্রদান করেও পণ্য ছাড়িয়ে নিতে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এজন্য, বিদেশ থেকে ফেরার আগে কাস্টমসের নিয়ম সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো, বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময় কোন কোন পণ্য বিনা শুল্কে আনা যায় এবং কোন পণ্যের জন্য শুল্ক দিতে হবে।
কাস্টমসের ফর্ম পূরণ এবং ঘোষণা:
প্রতিটি যাত্রীকে বিদেশ থেকে ফেরার সময় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে একটি ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হয়, যেখানে তারা বহনকৃত পণ্য সম্পর্কে ঘোষণা দেন। এতে শুল্ক মুক্ত এবং শুল্ক দেওয়ার প্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকা উল্লেখ করতে হয়। প্রতিবছর বাজেটের সময় এই তালিকা পরিবর্তিত হয়। এখানে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী শুল্কমুক্ত এবং শুল্কযুক্ত পণ্যের তালিকা তুলে ধরা হলো।
বিনা শুল্কে আনা যাবে যেসব জিনিস:
কিছু নির্দিষ্ট পণ্য শুল্ক ছাড়াই বাংলাদেশে আনা যায়। এই পণ্যগুলো সাধারণত যাত্রীর ব্যক্তিগত বা পরিবারের ব্যবহারের জন্য। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের নিয়ম অনুযায়ী শুল্ক ছাড়াই আনা যায় নিচের পণ্যগুলো:
ব্যক্তিগত স্বর্ণালঙ্কার: সর্বোচ্চ ১০০ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার এবং ২০০ গ্রাম রৌপ্যালঙ্কার (এক ধরণের অলঙ্কার ১২টির বেশি না হলে)।
গৃহস্থালী পণ্য: টাইপরাইটার, সেলাই মেশিন, সিলিং বা টেবিল ফ্যান।
বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম: রাইস কুকার, প্রেশার কুকার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, টোস্টার, ব্লেন্ডার, ফুড প্রসেসর, কফি মেকার।
ইলেকট্রনিক্স পণ্য: দুটি মোবাইল ফোন, ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ, ১৯ ইঞ্চি পর্যন্ত এলসিডি মনিটর, ২৯ ইঞ্চি পর্যন্ত এলইডি, সিআরটি বা এলসিডি টিভি।
অডিও এবং ভিডিও ডিভাইস: সিডি, ভিসিডি, ডিভিডি প্লেয়ার এবং সর্বোচ্চ চারটি স্পিকার।
এছাড়া, বিদেশ থেকে কোনো অসুস্থ যাত্রী ফিরলে তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বিনা শুল্কে আনা যায়।
শুল্ক দিয়ে আনা যাবে যেসব জিনিস:
কিছু পণ্য আনার ক্ষেত্রে শুল্ক প্রদান বাধ্যতামূলক, যদিও সেগুলো ব্যক্তিগত বা গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত হয়। এই পণ্যগুলোর জন্য নির্দিষ্ট হারে শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের শুল্ক তালিকা দেওয়া হলো:
রেফ্রিজারেটর ও ডিপ ফ্রিজ: ৫,০০০ টাকা শুল্ক।
এয়ার কন্ডিশনার (স্প্লিট টাইপ, ১৮০০০ বিটিইউ পর্যন্ত): ১৫,০০০ টাকা শুল্ক।
২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণের বার: ১০০ গ্রাম পর্যন্ত বিনা শুল্কে আনা যাবে। এরপর প্রতি ১১.৬৬৪ গ্রামে ২,০০০ টাকা হারে শুল্ক দিতে হবে।
২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত রৌপ্যের বার: ২০০ গ্রাম পর্যন্ত বিনা শুল্কে আনা যাবে। এরপর প্রতি ১১.৬৬৪ গ্রামে ৬ টাকা হারে শুল্ক দিতে হবে।
ডিশ অ্যান্টেনা: ৭,০০০ টাকা শুল্ক।
বিদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা:
যারা বিদেশি পাসপোর্টধারী, তারা সর্বোচ্চ এক লিটার মদজাতীয় পানীয় বিনা শুল্কে আনতে পারেন। তবে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য এই সুবিধা প্রযোজ্য নয়।
কাস্টমস নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
ঢাকা কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ফ্লাইট থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৫% যাত্রীর লাগেজ পরীক্ষা করা হয়। তবে, বিশেষ সতর্কতার প্রেক্ষিতে সব যাত্রীর লাগেজ পরীক্ষা করা হতে পারে। এজন্য যাত্রীরা যাতে কোনো অবৈধ পণ্য বহন না করেন তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
বিদেশ থেকে পণ্য আনতে গেলে কাস্টমস আইন সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।
যেসব পণ্য শুল্কমুক্ত আনা যায়, সেগুলোর তালিকা আগে থেকে জেনে নিন।
অতিরিক্ত পণ্য বহন করলে শুল্ক দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন এবং সংশ্লিষ্ট পণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন।
বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ফেরার সময় কাস্টমস আইন মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুলবশত কোনো পণ্য আটক হলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
মন্তব্য করুন